রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তর ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায় এসেছে অনেকদিন যাবৎ। সেই ক্যামেরার সামনেই গত বছরের মাঝামাঝি ওই অফিসেরই একটি টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটা এই ঘটনার পর ৯ মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, আরএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক কর্মকর্তার প্রভাবে দীর্ঘায়িত হয়েছে অপরাধী শনাক্তে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা নিজের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ের নানা ঘটনায় জড়িত থাকেন। তাদের সেই বন্ধু মহলটিই টেন্ডার ছিনতাইয়ে জড়িত থাকায় সিসিটিভি ফুটেজ থাকার পরেও অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে আরএমপিরই একাধিক সূত্র। পরে অবশ্য সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েই অপরাধী শনাক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন শাহমুখদুম থানা পুলিশ। চার্জশিট দাখিলের পূর্ব মূহুর্তে কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ৷ তারা আদালত থেকে জামিনে আছে কি না তাও বলতে পারছে না পুলিশ।
সূত্র মতে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পুলিশের কাজে সার্বক্ষণিক ভাড়ায় যানবাহন সরবরাহ সেবা ও অস্থায়ী ভিত্তিতে ১২ জন বাবুর্চি ও ১০ জন সুইপারসহ কিছু জনবল নিয়োগে দুটি গ্রুপের দরপত্র দাখিলের শেষদিন ছিল গত বছরের ২৪ মে। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন ঠিকাদার দুটি গ্রুপের টেন্ডারে অংশ নিতে আরএমপি সদর দপ্তরের দ্বিতীয় তলায় আসেন। তবে স্থানীয় একটি ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের পক্ষে সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেন কিছু সশস্ত্র ক্যাডার। দুই গ্রুপের এ দুটি গ্রুপের কাজ দুজন ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেই সেখানে তৎপর হয়ে ওঠেন।
সমঝোতার মাধ্যমে দুটি গ্রুপের টেন্ডার পরিকল্পনামাফিক তিনটি করে টেন্ডার জমা করেন ক্যাডার বাহিনী। ফলে টেন্ডারে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক অন্য ঠিকাদারদের তারা সিঁড়ি দিয়ে পুলিশ ভবনের দুই তলায় উঠতে বাধা দেন। এ সময় শফিউল আলম নামের একজন ঠিকাদার ও তার প্রতিনিধিরা টেন্ডারপত্র-বাক্সে ফেলতে গেলে ক্যাডার বাহিনী তাদের বাধা দেন। শফিউল আলম টেন্ডার জমা দিতে তৎপর হলে একপর্যায়ে তার কাগজপত্র ছিনতাই করে তাকে ও তার প্রতিনিধিদের অস্ত্রের মুখে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ঠিকাদার শফিউল আলম আরএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ও বাদী হয়ে শাহমখদুম থানায় পৃথক একটি মামলা করেন। ঘটনার পুরোটা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাধীন এলাকায় ঘটলেও ৯ মাসে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ওই কর্মকর্তা ও তার বন্ধুরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার আস্থাভাজন বলে পরিচিত। ওই নেতা বিভিন্ন সময়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে আনঅফিসিয়ালি ওই পুলিশ কর্মকর্তার সাহায্য নেন। ফলে আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাকে সমীহ করে চলেন। আর সেই সুযোগ নিয়েই নিজেদের সদর দপ্তরে ঘটা ছিনতাইকেও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
তবে শাহমুখদুম থানা পুলিশ দেরীতে হলেও ৭ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছেন। তারা হলেন, মহিদুল ইসলাম মোস্তফা, জানে আলম জনি, রুবেল, আসিফ হোসেন দিপু, অভিজিৎ হালদার রিংকু, ফরহাদ হোসেন, আনিসুর রহমান।
বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেন, টেন্ডার বাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখনসহ নানা অপরাধে জড়িয়েছেন এই চক্রটি। চক্রটির মুলহোতা মহিদুল ইসলাম মোস্তফা। সে রুয়েট কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি। এর আগে সে পশ্চিম রেলের টেন্ডার ছিনতাই এর ঘটনায় জড়িত ছিলো। ইতিমধ্যে সে শাহমুখদুম থানা এলাকার আতংক নামে পরিচিত। স্থানীয় প্রভাবে সে কয়েকটি জায়গা জমি জোরপূর্বক দখন করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। অপর মাস্টার মাইন্ডার হলেন, আসিক হাসান দিপু। তার মা ৮ নং ওয়ার্ডের জামায়াতে রোকন ও ওয়ার্ড মহিলা জামায়াতের সাধারন সম্পাদকের ছেলে।
রাজশাহীর প্রভাবশালী সদ্য নির্বাচিত দুই সাংবাদিক নেতার মদতে এরা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত বলে বিভিন্ন সুত্র নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, টেন্ডার ছিনতাই মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক আছে। (দ্বিতীয় পর্বে থাকছে মূলহোতা মোস্তফা ফিরিস্তি)
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।